হ্যারির আত্মজীবনী নিয়ে নীরব কেন রাজপরিবার
<![CDATA[
এ মুহূর্তে আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ব্রিটিশ রাজপুত্র ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারির বিস্ফোরক স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার। ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে হ্যারি যেসব স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস ও গণমাধ্যমে যেসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন, তা রাজপরিবার কীভাবে মোকাবিলা করে সে ব্যাপারে অনেকেরই কৌতূহল ছিল।
তবে প্রকাশিত হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও হ্যারি ও তার বই নিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো বিতর্কে কিংবা সমালোচনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কুখ্যাত নীতি হচ্ছে, ‘কোনো অভিযোগ নয়, কোনো ব্যাখ্যাও না’। সেই কৌশলটিই তারা প্রিন্স হ্যারির স্মৃতিকথা স্পেয়ার’র বেলায়ও প্রয়োগ করছে।
গত ১০ জানুয়ারি বইটি বাজারে আসে। অবশ্য প্রকাশিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল বইটি। মা ছাড়া কীভাবে বড় হয়েছেন; শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন-এই বড় হয়ে উঠার প্রক্রিয়ায় যেসব অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে সেসব কথাই বলে আসছিলেন প্রিন্স হ্যারি। সবশেষ নিজের স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ আরও সবিস্তারে তুলে ধরেছেন তিনি।
এর মধ্যে তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত অনেক কথা যেমন উঠে এসেছে, একইভাবে যে পরিবারে তিনি বড় হয়েছেন সেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্দর মহলের অজানা অনেক কথাই সামনে আনার সাহস দেখিয়েছেন হ্যারি।
আরও পড়ুন: স্মৃতিকথায় সব লিখলে বাবা ও ভাই ক্ষমা করতেন না: হ্যারি
বলা চলে, রীতিমতো বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজপরিবারের মুখোশ উন্মোচন করেছেন তিনি। প্রায় দুই যুগ ধরে নিজ পরিবারের সদস্যদের যেসব অন্যায়-অবিচার তাকে সহ্য করতে হয়েছে, তা জনসমক্ষে ফাঁস করেছেন।
স্পেয়ার-এ হ্যারি নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন। যার মধ্যে রয়েছে প্রিন্স উইলিয়ামের বিরুদ্ধে তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগ, স্ত্রী মেগান মার্কেল সম্পর্কে গণমাধ্যমে সৎ মা কুইন কনসর্ট ক্যামিলার নেতিবাচক কথাবার্তা ও মা প্রিন্সেস ডায়ানা নিহত হওয়ার মতো বিষয়গুলো।
তবে হ্যারি ও তার বই স্পেয়ার নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের আক্রমণ অব্যাহত থাকলেও রাজ পরিবার, রাজকীয় সংস্থা ও এর সদস্যরা এখনও একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এটা জনসাধারণের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজপরিবারের নীরবতার ইতিহাস
ব্রিটিশ রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রবল বিতর্কের মধ্যেও চুপ করে থাকার অভিযোগ নতুন নয়। সামাজিক নানা অন্যায় থেকে হ্যারির মা ডায়ানার মৃত্যুর মতো বিভিন্ন বিতর্কে স্রেফ মুখে কুলুপ এঁটে থাকাই যেন নীতি রাজপরিবারের।
যেমনটা বলেছেন জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ভ্যানিটি ফেয়ারের সংবাদদাতা ও দ্য নিউ রয়্যালস বইয়ের লেখক কেটি নিকোল। তিনি বলেন, ‘নীরবতা (বিতর্কের ক্ষেত্রে) রাজপরিবারের একটি পরীক্ষিত নীতি। রাজপ্রাসাদ কোনোভাবে মুখ খুলতে অনিচ্ছুক। কারণ তারা জানেন, একবার তারা এটি করলে বিতর্ক কেবল বাড়বেই। আর হ্যারি এমন অনেক অভিযোগ করেছেন যে প্রত্যেকটির সমাধান করা প্রায় অসম্ভব।’
নিকোল প্রায় দুই দশক ধরে রাজপরিবারের খবরাখবর কাভার করেছেন। রাজ পরিবারের নীরবতাকে ‘একটি বুদ্ধিদ্বীপ্ত কৌশল’ বলেই বর্ণনা করেছেন যা আসলে হ্যারির খ্যাতি ও ভাবমূর্তিরই ক্ষতি করছে। নিকোল বলেন, প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রয়োজনে প্রকাশ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী ছিলেন।
আরও পড়ুন: আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ /রাজপরিবারকে কি মাটিতে টেনে নামালেন হ্যারি?
নিকোলের কথায় ‘রানি শুধু তখনই কথা বলতেন, যখন তাকে কথা বলার দরকার হত এবং সেটি প্রায়ই সংক্ষিপ্ত ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত হত।’ যেমন ২০২১ সালের মার্চে হ্যারি ও মেগানের অপরাহ উইনফ্রেকে সাক্ষাতকারের পরিপ্রেক্ষিতে বাকিংহাম প্যালেস রানির পক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি জারি করেছিল। তাতে বলা হয় যে, ‘হ্যারি ও মেগানের সংগ্রামের কথা শুনে তিনি (রানি) ‘দুঃখিত’ ও বর্ণবাদের অভিযোগে তারা (রাজপরিবার) বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।’
]]>